ব্লাড ক্যান্সার, যাকে রক্তের ক্যান্সার বা হেমাটোলজিক ক্যান্সারও বলা হয়, এটা মূলত শরীরের রক্ত তৈরির জায়গা যেমন অস্থিমজ্জা, লিম্ফ নোড আর রক্তকণিকায় হয়। এই ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে আছে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা আর মাইলোমার মতো নানা ধরন।
অন্যান্য অনেক বড় রোগের মতো, ব্লাড ক্যান্সারও যদি শুরুতেই ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর হয়, রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়।এই লেখায় আমরা সহজভাবে জানব—ব্লাড ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ কী কী হতে পারে, আর কেন প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা পড়াটা এত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্লাড ক্যান্সারের পিছনে সাধারণ কারণ
জেনেটিক কারণ :
উত্তরাধিকারসূত্রে মিউটেশন: কিছু মানুষ তাদের মা-বাবার কাছ থেকে এমন জেনেটিক পরিবর্তন পায়, যা ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণ হিসেবে, ডাউন সিনড্রোম বা লি-ফ্রোমেনি সিনড্রোমের মতো কিছু জেনেটিক অসুখ লিউকেমিয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
অর্জিত মিউটেশন:
সোম্যাটিক মিউটেশন: জীবনের কোনো সময় রক্তের কোষের ডিএনএ-তে পরিবর্তন ঘটে, যেটা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। বয়স বাড়া বা কিছু পরিবেশগত কারণ যেমন রাসায়নিক, ধোঁয়া, বা বিকিরণের সংস্পর্শে এসে এই পরিবর্তনগুলো হয়।
পরিবেশগত কারণ:
রেডিয়েশনের সংস্পর্শ:
যদি কেউ অনেক বেশি মাত্রায় রেডিয়েশন-এর মধ্যে থাকেন, যেমন ক্যান্সার চিকিৎসার সময় রেডিয়েশন থেরাপি নিলে বা কোনো পারমাণবিক দুর্ঘটনার আশেপাশে থাকলে, তাহলে রক্তের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
রাসায়নিকের সংস্পর্শ:
কিছু ক্ষতিকর কেমিক্যাল যেমন বেনজিন, বা কিছু কেমোথেরাপির ওষুধ শরীরে গেলে রক্তের কোষে পরিবর্তন হতে পারে। এই কারণে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।
ভাইরাল সংক্রমণ:
ভাইরাসজনিত সংক্রমণ:
কিছু ভাইরাস শরীরে ঢুকে রক্তের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন, এপস্টাইন-বার ভাইরাস (EBV) নামে একধরনের ভাইরাস কিছু নির্দিষ্ট ধরনের লিম্ফোমা ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত দেখা গেছে।
ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা রক্তের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে :
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেসব কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে— যেমন অটোইমিউন রোগ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার ওষুধ নিতে হয়— এসব অবস্থায় রক্তের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
পারিবারিক ইতিহাস:
যদি কারও পরিবারে আগে রক্তের ক্যান্সার হয়ে থাকে, তাহলে তার নিজের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়। তবে মনে রাখা দরকার, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাদের কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই, তারাও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
বয়স:
রক্তের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। অনেক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার বেশি দেখা যায় বয়স্কদের মধ্যেই। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, এই রোগ শুধুমাত্র বয়সের কারণে হয় না। জেনেটিক মানে বংশগত কারণ এবং পরিবেশের প্রভাব— এই দুইয়ের মিলেই অনেক সময় রোগটা দেখা যায়। এই বিষয়গুলো একে অপরের সঙ্গে জটিলভাবে সম্পর্কিত। এখনও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যাচ্ছেন— ব্লাড ক্যান্সারের পিছনে আর কী কী কারণ কাজ করে তা খুঁজে বের করতে।যদি আপনি ভাবেন আপনার ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকতে পারে, তাহলে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা খুবই জরুরি। কারণ, একজন বিশেষজ্ঞ আপনার শারীরিক অবস্থা বুঝে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।”
ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা:
এই অনুচ্ছেদটি ব্লাড ক্যান্সারের একটি প্রাথমিক লক্ষণের ব্যাখ্যা দেয়—যেমন ক্লান্তি ও দুর্বলতা। এখানে সহজভাবে বললে:
যখন কারো ব্লাড ক্যান্সার হয়, তখন রক্তের মধ্যে অস্বাভাবিক ক্যান্সার কোষ তৈরি হতে শুরু করে। এই কোষগুলো রক্তের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে শরীরে লাল রক্ত কণিকার (Red Blood Cells) সংখ্যা কমে যায়। এই অবস্থাটাই রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া নামে পরিচিত।
লাল রক্ত কণিকা শরীরের বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। কিন্তু যখন এই কণিকার পরিমাণ কমে যায়, তখন শরীরে ঠিকভাবে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। এর ফলেই দেখা দেয় অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁপ ধরে যাওয়া বা একটুতেই নিঃশ্বাসে কষ্ট হওয়া।
এই ধরনের লক্ষণ যদি দীর্ঘদিন থাকে এবং ধীরে ধীরে বেড়ে যায়, তবে সেটা হতে পারে ব্লাড ক্যান্সারের একটি প্রাথমিক সংকেত। তাই এমন উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অব্যক্ত ওজন হ্রাস:
যদি হঠাৎ করে ওজন কমতে থাকে—কোনো ডায়েট না করেও বা খাবারের পরিমাণ না কমিয়েও—তাহলে সেটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। ব্লাড ক্যান্সার এমন এক সমস্যা, যেখানে শরীরের ভেতরে ক্যান্সার কোষগুলো খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। এই কোষগুলো শরীরের প্রচুর শক্তি খরচ করে ফেলে।
ফলে আপনি যতই নিয়মিত খাচ্ছেন মনে করেন না কেন, সেই খাবার থেকে শরীর প্রয়োজন মতো শক্তি পাচ্ছে না। ক্যান্সার কোষগুলো সেই শক্তি আগেই ব্যবহার করে ফেলে। তাই শরীরের ওজন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে, এবং সেটা আপনি বোঝার আগেই অনেকটা নেমে যেতে পারে।
এই রকম অজান্তেই ওজন কমে যাওয়া ব্লাড ক্যান্সারের একটি গোপন সংকেত হতে পারে।
ঘন ঘন সংক্রমণ:
ব্লাড ক্যান্সার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। সাধারণত আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু যখন ব্লাড ক্যান্সার হয়, তখন এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ফলে একজন মানুষ বারবার নানা রকম সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে, যা সাধারণের চেয়ে বেশি সময় ধরে এবং বারংবার ঘটে। এমন ক্রমাগত সংক্রমণ কখনো কখনো ব্লাড ক্যান্সারের একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
এ কারণে, যদি কেউ বারবার সংক্রমণে ভুগে বা সুস্থ হতে খুব দেরি হয়,
লিম্ফ নোড প্রসারিত হওয়া :
লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শরীর থেকে জীবাণু ও দূষিত পদার্থ সরিয়ে ফেলার কাজ করে। কিন্তু যখন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যান্সার হয়, তখন ক্যান্সার কোষগুলো লিম্ফ নোড বা লিম্ফ গ্রন্থিতে জমে যেতে থাকে।
এই কারণে লিম্ফ নোডগুলো ফোলাভাব দেখা দেয়। এই ফুলে যাওয়া সাধারণত ব্যথাহীন হয় এবং ঘাড়, বগল বা কুঁচকি অঞ্চলে ত্বকের নিচে সহজেই হাতে আসতে পারে।
যদি এমন ব্যথাহীন, স্থির ফোলা লিম্ফ নোড শরীরে দেখা দেয় এবং তা দীর্ঘ সময় থাকে, তবে এটি ব্লাড ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।
ক্ষত এবং রক্তপাত:
রক্তের ক্যান্সার শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। রক্ত জমাট বাঁধা মানে হলো ক্ষত স্থানগুলোতে প্লেটলেট নামের ছোট ছোট রক্ত কণিকা একত্রিত হয়ে রক্তপাত বন্ধ করা। কিন্তু যখন ব্লাড ক্যান্সার হয়, তখন এই প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়, যাকে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বলা হয়।
প্লেটলেট কম থাকায় খুব সহজেই ক্ষত তৈরি হয় এবং রক্তপাত অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে। বিশেষ করে লিউকেমিয়া রোগীদের মধ্যে এই সমস্যা খুব সাধারণ। এর ফলে শরীরের ছোটখাটো জখম থেকেও রক্তপাত বেশি হয় এবং থামতে সময় লাগে।
এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
হাড়ের ব্যথা:
ক্যান্সার কোষগুলো অস্থি মজ্জায় ঢুকে যেতে পারে, যেখানে রক্তকণিকা তৈরি হয়। এর ফলে হাড়ে ব্যথা শুরু হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং অনেক সময় শারীরিক পরিশ্রম করার সময় বা রাতে বাড়তে পারে।
মায়লোমা নামে একটি বিশেষ ধরনের ব্লাড ক্যান্সার হাড়ের ব্যথার সঙ্গে বেশি যুক্ত থাকে। এতে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ব্যথা আরও তীব্র হয়।
যদি হাড়ে এমন ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং সাধারণ পেন কিলারের মাধ্যমে কমে না, তবে এটা ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
নিঃশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে :
ব্লাড ক্যান্সারের কারণে লোহিত রক্ত কণিকার (রেড ব্লাড সেল) সংখ্যা কমে যেতে পারে। লোহিত রক্ত কণিকা শরীরের টিস্যুগুলোতে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। যখন এই কণিকা কমে যায়, তখন শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না।
ফলে সাধারণ কাজ করলেও বা সামান্য শারীরিক পরিশ্রম করলেও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এটা শরীরের একটি সংকেত যে রক্তে অক্সিজেনের অভাব হচ্ছে, যা ব্লাড ক্যান্সারের কারণে হতে পারে।
রাতের ঘাম:
রক্তের ক্যান্সারের কারণে শরীরে এমন একটি সমস্যা দেখা দিতে পারে যা রাতে অতিরিক্ত ঘামের সৃষ্টি করে, যদিও ঘর ঠান্ডা থাকে বা অন্য কোনো বাহ্যিক কারণ নেই। এই ধরনের রাতের ঘাম সাধারণ ঘামের মতো নয়, এটি বেশি এবং অনিয়মিত হয়।
এটা রক্তের ক্যান্সারসহ কিছু রক্তের রোগের একটি লক্ষণ হতে পারে, কারণ এই রোগগুলো শরীরের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনের কারণে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রভাবিত করে। রাতের বেলা এমন ঘামের সমস্যার দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার।
পেটে অস্বস্তি:
কিছু ধরনের ব্লাড ক্যান্সার, যেমন লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা, শরীরের প্লীহা এবং লিভারকে ফুলিয়ে দিতে পারে। প্লীহা ও লিভার ফুলে যাওয়ার ফলে পেটে অস্বস্তি বা ভারী ভাব হতে পারে। অনেক সময় পেটে ব্যথা বা পূর্ণতার অনুভূতিও হতে পারে, যেন কিছু আটকে আছে।
চুলকানি:
চুলকানি বা প্রুরিটাস কিছু ধরনের রক্তের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, বিশেষ করে হজকিনের লিম্ফোমার ক্ষেত্রে। চুলকানির সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হয় যে ক্যান্সার কোষগুলো শরীরে কিছু রাসায়নিক পদার্থ মুক্তি দেয়, যা ত্বকের চুলকানি সৃষ্টি করে।
এই ধরনের চুলকানি সাধারণ চুলকানির মতো হয় না; অনেক সময় বেশি তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। যদি এমন চুলকানি অনেকদিন ধরে থাকে এবং অন্য কারণ না থাকে, তাহলে এটি রক্তের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।
প্রথমে সনাক্তকরণ গুরুত্বপূর্ণ
উন্নত চিকিৎসার বিকল্প:
ব্লাড ক্যান্সার যদি শুরুর দিকে সনাক্ত করা যায়, তাহলে চিকিৎসার অনেক ধরনের বিকল্প পাওয়া যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন লক্ষ্যভিত্তিক থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে, বিশেষ করে যখন এই চিকিৎসা শুরু হয় ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে।
এর ফলে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। তাই সময়মতো সনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উন্নত বেঁচে থাকার হার:
প্রাথমিক পর্যায়ে রক্তের ক্যান্সার নির্ণয় করা হলে রোগের ফলাফল সাধারণত অনেক ভালো হয়। সময়মতো সঠিক হস্তক্ষেপ ও চিকিৎসা শুরু করলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয় এবং রোগীর সুস্থ থাকার সম্ভাবনা অনেক বাড়ে।
এর ফলে চিকিৎসার সফলতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে বেঁচে থাকার সুযোগ বেড়ে যায়। এজন্য শুরুতেই রোগ শনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসার তীব্রতা হ্রাস:
ব্লাড ক্যান্সার যদি প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা যায়, তাহলে কম আক্রমণাত্মক এবং আরও লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে থেরাপির জোর কমে যায়, যার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হয়।
এভাবে চিকিৎসা করা হলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, এবং চিকিৎসার সময় ও পরে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন সহজ হয়। তাই শুরুর দিকে সঠিক সনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জটিলতা প্রতিরোধ:
রক্তের ক্যান্সার শরীরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে সংক্রমণ, রক্তপাতের সমস্যা এবং বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতার হ্রাস অন্যতম। যখন ক্যান্সার শুরুর দিকে শনাক্ত করা হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা হয়, তখন এসব জটিলতা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
এভাবে রোগের উন্নতি দ্রুত ঘটে এবং জীবনযাত্রার মানও ভালো থাকে। প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা জটিলতা কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপসর্গের উন্নত ব্যবস্থাপনা:
প্রাথমিক হস্তক্ষেপ রোগীর সামগ্রিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং লক্ষণগুলোর তাত্ক্ষণিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেয়। এর মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সারের কারণে দেখা দেয়া ব্যথা, ক্লান্তি এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলোকে আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করা যায়।
এই ধরনের সময়মতো চিকিৎসা রোগীর জীবনযাত্রার মান বাড়ায় এবং শারীরিক ও মানসিক শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সচেতনতা এবং শিক্ষা বৃদ্ধি:
প্রাথমিক সনাক্তকরণের চেষ্টা রক্তের ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর গুরুত্ব মানুষকে বোঝানো হলে, তারা সহজেই প্রাথমিক সতর্কতা চিহ্নগুলো চিনতে পারে।
এই সচেতনতা দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসার দিকে নিয়ে যায়, যা সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই সচেতনতা এবং নিয়মিত পরীক্ষা রক্তের ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
ব্লাড ক্যান্সার একটি জটিল রোগের গ্রুপ, যা বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দিয়ে প্রকাশ পায়। তাই প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং সময়মতো কার্যকর চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এই লক্ষণগুলো সনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জীবন রক্ষা এবং সুস্থতার পথ খুলে দেয়।
প্রাথমিক সনাক্তকরণের গুরুত্ব শুধু চিকিৎসার বিকল্প বাড়ানোতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি এবং জীবনের মান উন্নত করার সুযোগও এনে দেয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সচেতনতা এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল দৃষ্টিভঙ্গি রক্তের ক্যান্সার সনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
Disclaimer:
This information on this article is not intended to be a substitute for professional medical advice, diagnosis, treatment, or standard medicines. All content on this site contained through this Website is for general information purposes only.