ফুসফুসের ক্যান্সার হল এক ধরনের ক্যান্সার যা ফুসফুসে শুরু হয় এবং এটি বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারের প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম। এই ক্যান্সার সাধারণত ব্রঙ্কি নামক কোষ থেকে শুরু হয়, তবে এটি ফুসফুসের অন্য যে কোনো অংশেও হতে পারে। ফুসফুসের ক্যান্সারের দুটি প্রধান প্রকার রয়েছে: নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC) এবং স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC)। এনএসসিএলসি প্রকারটি সবচেয়ে সাধারণ, যা 85% কেসে দেখা যায়, অন্যদিকে এসসিএলসি আরও কম প্রচলিত কিন্তু খুব আক্রমণাত্মক।
ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হল তামাকের ধোঁয়া, বিশেষ করে সিগারেটের ধোঁয়া। সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ এবং সময় বাড়লে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। তাছাড়া, ধূমপান না করলেও পরিবেশগত কারণে, যেমন বায়ু দূষণ, রেডন গ্যাস, অ্যাসবেস্টস এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে, এই ক্যান্সার অনেক সময় শুরুতে কোনো উপসর্গ দেখায় না। যখন ক্যান্সার অগ্রসর হয়, তখন শ্বাসকষ্ট, বুকের ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, রক্ত দেখা বা কাশি বেড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক শনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রীনিং পদ্ধতি, যেমন লো-পার্ট ফিগারড টোমোগ্রাফি (এলডিসিটি), ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে সেলুলার ব্রেকডাউন সনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করছেন তাদের জন্য। তবে, এই স্ক্রীনিং পদ্ধতিগুলির মাঝে কখনও কখনও মিথ্যা পজিটিভ রিপোর্টও আসতে পারে, যা অতিরিক্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগের ধাপ এবং প্রকার অনুসারে ভিন্ন হয়। কেমোথেরাপি, বিকিরণ চিকিৎসা, ইমিউনোথেরাপি এবং সেলুলার থেরাপি মিশ্রিতভাবে ব্যবহার করা হয়। এসসিএলসি-র ক্ষেত্রে সাধারণত কেমোথেরাপি ব্যবহৃত হয়, যখন এনএসসিএলসি-র ক্ষেত্রে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি বেশি প্রাধান্য পায়। তবে ক্যান্সারের উচ্চতর পর্যায়ে চিকিৎসা ওষুধের মিশ্রণ প্রয়োজন হতে পারে।
ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য পাঁচ বছরের সহনশীলতা হার কম এবং সাধারণত ক্যান্সারের অন্যান্য প্রকারের তুলনায় এটি কম ফলপ্রসূ। তবে, প্রাথমিক পর্যায়ে ধূমপান ছাড়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য এটি খুবই কার্যকর। সুতরাং, ধূমপান ত্যাগ এবং ফুসফুসের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য ধূমপান ত্যাগ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এর পেছনের কারণগুলো কী?
ফুসফুসের ক্যান্সার মানে হলো ফুসফুসের কোষে এমনভাবে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শুরু হয়, যেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা পৃথিবীজুড়ে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর বড় কারণ। এর পেছনে অনেক রকম কারণ থাকতে পারে—কেউ কেউ জন্মসূত্রে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, আবার কারও ক্ষেত্রে দূষিত বাতাস, তামাকজাত পণ্যের ধোঁয়া বা বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শই মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণগুলো বুঝে নেওয়া খুব জরুরি, কারণ এতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, যেমন ধূমপান বন্ধ করা, দূষণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা বা ঝুঁকিতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত পরীক্ষা করানো। কারও ঝুঁকি যদি বেশি হয়, তবে চিকিৎসকের দেওয়া নির্দিষ্ট ওষুধ বা থেরাপি অনুসরণ করাটাও অনেক সময় ক্যান্সার প্রতিরোধে বা দমন করতে সাহায্য করতে পারে।
ধূমপান:
ফুসফুসের ক্যান্সার মানে হলো ফুসফুসের কোষে এমনভাবে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শুরু হয়, যেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা পৃথিবীজুড়ে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর বড় কারণ। এর পেছনে অনেক রকম কারণ থাকতে পারে—কেউ কেউ জন্মসূত্রে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, আবার কারও ক্ষেত্রে দূষিত বাতাস, তামাকজাত পণ্যের ধোঁয়া বা বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শই মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই কারণগুলো বুঝে নেওয়া খুব জরুরি, কারণ এতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, যেমন ধূমপান বন্ধ করা, দূষণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা বা ঝুঁকিতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত পরীক্ষা করানো। কারও ঝুঁকি যদি বেশি হয়, তবে চিকিৎসকের দেওয়া নির্দিষ্ট ওষুধ বা থেরাপি অনুসরণ করাটাও অনেক সময় ক্যান্সার প্রতিরোধে বা দমন করতে সাহায্য করতে পারে।
রেডন গ্যাস:
রেডন হলো এমন এক ধরনের তেজস্ক্রিয় গ্যাস যা আমাদের চারপাশের মাটির নিচে ধীরে ধীরে তৈরি হয়। এই গ্যাস সহজেই বাতাসের সঙ্গে মিশে যায় এবং আমরা শ্বাসের মাধ্যমে সেটি গ্রহণ করতে পারি। দীর্ঘ সময় রেডনের সংস্পর্শে থাকা ফুসফুসের কোষে ক্ষতি করতে পারে এবং এতে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মাটির নিচে রেডনের মাত্রা বেশি, সেখানে বাড়ির ভিতরে এই গ্যাস জমে থাকতে পারে। তাই বাড়ির রেডনের মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করা এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি, যাতে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়
সুরক্ষা সরঞ্জামেই মেলে শব্দ ও বিষাক্ত পদার্থ থেকে:
অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল আর ডিজেলের ধোঁয়ার মতো কিছু রাসায়নিক পদার্থ বহু বছর ধরে মানুষের শরীরে জমে গিয়ে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে — বিশেষ করে ফুসফুসে। নির্মাণ, খনি বা কলকারখানার মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা এই ধরনের পদার্থের সঙ্গে প্রতিদিন ঘন ঘন সংস্পর্শে থাকেন। এসব বিষাক্ত কণার শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে কোষের গঠন নষ্ট করতে পারে। তাই এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার সময় মুখে মাস্ক পরা, সঠিক সুরক্ষা পোশাক ব্যবহার করা আর নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো খুবই জরুরি। সতর্ক থাকলে বড় বিপদ এড়ানো যায়।
বংশগত উপাদান:
যদিও ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের অপরিহার্য চালক, বংশগত কারণগুলি একইভাবে ব্যক্তিগত শক্তিহীনতার সিদ্ধান্তে একটি অংশ গ্রহণ করে। ফুসফুসের ক্যান্সারের পারিবারিক পটভূমিতে থাকা ব্যক্তিদের ভাগ করা বংশগত এবং প্রাকৃতিক উপাদানগুলির কারণে উচ্চ ঝুঁকি থাকতে পারে। বংশগত রূপান্তর, যেমন EGFR বা KRAS গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে অধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
বায়ু দূষণ:
বায়ু দূষণ আমাদের ফুসফুসের জন্য এক মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। বায়ু দূষণ মানে বাতাসে মিশে থাকা ক্ষুদ্র কণা, নাইট্রোজেন অক্সাইড, এবং নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক দীর্ঘ সময় শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুসের কোষে ক্ষতি হয়। বিশেষ করে বড় শহরগুলোর যেখানে যানবাহনের চলাচল বেশি, সেখানে বায়ুতে দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এই দূষিত বাতাস ফুসফুসে ধীরে ধীরে জমে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই বায়ু দূষণ কমানো এবং পরিচ্ছন্ন বাতাস নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত গাছ লাগানো, যানবাহনের ধোঁয়া কমানো, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
অতীতের ফুসফুসের অসুস্থতা:
যারা ফুসফুসের নির্দিষ্ট রোগে ভুগছেন, যেমন দীর্ঘদিন ধরে চলা নিউমোনিয়া বা সিওপিডি এবং ফুসফুসের ফাইব্রোসিস, তাদের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এই ধরনের রোগে ফুসফুসের টিস্যুতে বারবার জ্বালা-পোড়া এবং ক্ষতি হয়, যা ক্যান্সার কোষ বেড়ে উঠার জন্য এক ধরনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়। তাই যারা এই ধরনের সমস্যা নিয়ে রয়েছেন তাদের অবশ্যই বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।
খাদ্যতালিকাগত উপাদান:
আমরা যা খাই, তার প্রভাব আমাদের শরীরের উপর পড়েই। যদিও ফুসফুসের ক্যান্সারে খাবারের সরাসরি ভূমিকা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে—নির্দিষ্ট কিছু খাবার এই ঝুঁকি বাড়াতে বা কমাতে পারে। যেমন, টাটকা ফল আর শাকসবজি শরীরের কোষগুলোকে শক্তি দেয়, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আর এভাবেই দেহ নিজেই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে একটা প্রাকৃতিক ঢাল তৈরি করে। অন্যদিকে, বেশি পরিমাণে লাল মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন হ্যাম, সসেজ) খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করতে পারে, এবং গবেষণা বলছে এতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। যদিও এখনো এই বিষয় নিয়ে অনেক কিছু জানার বাকি, তবে একথা বলাই যায়—প্রাকৃতিক, সাদাসিধে খাবারই শরীরের পক্ষে সবচেয়ে নিরাপদ। খাবার যেন শুধু পেট ভরানোর জন্য না হয়, বরং সেটা যেন হয় শরীরকে সুস্থ রাখার একটা অভ্যাস।
হরমোনের পরিবর্তন:
মানবদেহে হরমোনের ওঠানামা শরীরের নানা জটিল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, আর এই হরমোনের ভারসাম্য যদি কোনোভাবে বিঘ্নিত হয়, তাহলে সেটা রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মতো হরমোন ফুসফুসের ক্যান্সার তৈরির প্রক্রিয়ায় কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির সময় শরীরে যে ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, তা এখনো গবেষকদের গভীর অনুসন্ধানের বিষয়। যদিও এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না, তবুও বোঝা যাচ্ছে—শরীরের হরমোনের ভারসাম্য আর তার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে।
উপসংহার
সব মিলিয়ে বললে, ফুসফুসের ক্যান্সার একধরনের কঠিন রোগ, যেটা আমাদের জীবনযাপন, আশেপাশের পরিবেশ আর বংশগত কারণে হতে পারে। ধূমপান এই রোগের সবচেয়ে বড় আর সহজে এড়ানো যায় এমন কারণ। তাই যারা এখনও ধূমপান করেন, তাদের জন্য এটা বন্ধ করাটা খুবই জরুরি। এর পাশাপাশি, রেডন গ্যাস, দূষিত বাতাস আর কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শেও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে—যেটা অনেক সময় কাজের জায়গায় হয়ে থাকে। এসবের জন্য সচেতন থাকা আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।
এছাড়া, মেয়েদের হরমোন বা পরিবারে যদি ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে সময়মতো পরীক্ষা করানো আর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আরও বেশি দরকার হয়ে পড়ে। তাই ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের দরকার সচেতন হওয়া, সিগারেট থেকে দূরে থাকা, ভালো খাবার খাওয়া আর নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করানো। শরীরের যত্ন নিলে, অনেক বড় বিপদও এড়িয়ে চলা যায়।
Also Read: পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হতে পারে?
Disclaimer:
This information on this article is not intended to be a substitute for professional medical advice, diagnosis, treatment, or standard medicines. All content on this site contained through this Website is for general information purposes only.